Skip to Content

The Burden of Unbearable Truth

লেখক: শেখ সাদমান আল নাফিSheikh Sadman Al Nafi
November 18, 2025 by
The Burden of Unbearable Truth
MUKTO AL MAMUN
| No comments yet

শুরুটা ছিল কেবল একটা হেডলাইন দিয়ে: “নবম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষিত, অভিযুক্ত শিক্ষক”।

পত্রিকার ওই একটি লাইন সারা শহরকে কাঁপিয়ে দিল। স্কুলের গেটে জনবিক্ষোভ, শিক্ষকদের মধ্যে জঘন্য রাজনীতি—কেউ মীমের (মেয়েটি) জন্য নয়, কেবল নিজের প্রাইভেট বাণিজ্যের সুযোগ খুঁজছিল। গুজব আর সত্যের মাঝে তখন আসল মানবিকতাটাই চাপা পড়ে গেল।

রিয়াদ ছিল মীমের সহপাঠী। চুপচাপ, সংবেদনশীল এক ছেলে। মীম হয়তো তাকে সিরিয়াসভাবে নেয়নি, কিন্তু রিয়াদ জানতো তার মন শুধু মীমের জন্যই। যখন খবরটা বের হলো, রিয়াদ কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারল না। তার মনে হলো, কোনো এক ভয়ঙ্কর ভুল আছে। সে সিদ্ধান্ত নিল, যেভাবেই হোক, সে এই ঘটনার আসল সত্য জানবেই।

সত্যের জন্য ভালোবাসা

বছরগুলো গেল। তারা দশম, তারপর ইন্টারমিডিয়েটে উঠলো। রিয়াদের মনেও তখন একটাই চিন্তা— “এই সত্যটা জানতেই হবে, কিন্তু তার কাছে পৌঁছানোর জন্য দরকার একমাত্র বিশ্বাস, যা ভালোবাসা ছাড়া মেলে না।”

ধীরে ধীরে মীম রিয়াদের কাছাকাছি আসে। রিয়াদের আর কিছু ছিল না, ছিল শুধু তার নিঃশর্ত আনুগত্য আর নীরব সমর্থন। এই আশ্রয় মীম আর কোথাও পায়নি। তাদের মাঝে সম্পর্ক তৈরি হলো। রিয়াদ তখন আর কেবল সত্যের পেছনে ছুটছে না, সে সত্যিই মীমকে ভালোবেসে ফেলেছে। মীমও যেন তার ভাঙা জীবনের ক্ষত সারাতে রিয়াদের মধ্যে আশ্রয় খুঁজে নিল।

একদিন তারা শহরের এক পুরোনো ক্যাফেতে বসেছিল। রিয়াদ মীমের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,

“আমি জানি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি বাঁচতে চাই, মীম, কিন্তু তোমার কষ্টের বোঝা না জানলে আমি দমবন্ধ হয়ে মরে যাব। বিশ্বাস করো, আমি কোনো বিচার করতে আসিনি।”

মীম চমকে উঠল। তার চোখে জল ভরে গেল। সে কোনো কথা না বলে উঠে গেল, রিয়াদকে একা রেখে। সত্যের ভার সে কাউকে দিতে ভয় পাচ্ছিল।

ত্রিশ বছর, একই প্রশ্ন

ত্রিশ বছর পর...

ঢাকার এক লঞ্চের করিডোরে তাদের হঠাৎ দেখা। সময়ের ছাপ দুজনের মুখেই—চুলে পাকা, চোখে ক্লান্তি। কিন্তু মুখটা চিনতে ভুল হলো না।

“মীম...?” রিয়াদ ডাকল।

মীম নীরবতা ভেঙে দীর্ঘশ্বাস ফেলল: “এত বছর পরও তোমার সেই একই প্রশ্ন, তাই না? সত্যটা কী ছিল?”

রিয়াদ হাসল—ত্রিশ বছরের অপেক্ষা আর বেদনার হাসি।

মীম চোখ নিচু করে ফিসফিসিয়ে বলল, “মনে আছে আমার জন্মদিনে তোর দেওয়া মেমোরি কার্ডটা? স্যার সেটা নিয়ে অশ্লীল ভিডিও ভরে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে। আমি ভয় পেয়ে তার কথা মানি। একদিন সে আমাকে নিয়ে যায়, আইসক্রিম খাওয়ায়, তারপর কিছুই মনে নেই। চোখ খুলে দেখি, সব শেষ। এরপর সে ভিডিও দেখিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যায়...”

রিয়াদ শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “আমি বিশ্বাস করি তুমি কষ্ট পেয়েছ। কিন্তু এই গল্পটা যেন কাউকে বাঁচাতে চেয়ে, অনেক কষ্ট করে তৈরি করা, মীম। এটা তোমার সমস্ত যন্ত্রণার কারণ হতে পারে না।”

মীম আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাল, কোনো উত্তর দিল না। তাদের পথ আবার আলাদা হলো।

💔 চূড়ান্ত মোড়: অসহনীয় সত্য

কয়েক মাস পর এক বিয়ের অনুষ্ঠানে রিয়াদের দেখা হলো মীমের এক পুরোনো বান্ধবীর সঙ্গে। বান্ধবী শুধু বলল, “তুমি যা শুনেছো তা অর্ধেক, এবং তোমার সত্যের চাবিকাঠি আছে মীমের কাছেই।”

রিয়াদ পরের দিনই মীমের সঙ্গে দেখা করল। তার চোখে এবার আর কৌতূহল নয়, ছিল কেবল নৈঃশব্দ্য ও আকুলতা।

মীম প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় রিয়াদকে সব খুলে বলল।

“রিয়াদ, প্রথমদিকে আমি স্যারকে বিশ্বাস করতাম। তারপর... তারপর আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। মাকে যখন জানালাম, মা তখন কেঁদে-কেঁদে বলল—

‘সে তোর স্যার না, সে তোর বাবা।’”

রিয়াদ স্থির হয়ে গেল। যেন তার ভিতরের সবকিছু এক লহমায় গুঁড়িয়ে গেল।

মীম কাঁদতে কাঁদতে বলল: “টেস্টে প্রমাণ হয়েছিল সত্যিই তিনি আমার বাবা। মা তখন লজ্জায়, অনুশোচনায়, সমাজের ভয়ে মানসিকভাবে ভেঙে গেলেন। আমি নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বান্ধবী আমাকে বাঁচায়। কিন্তু মা সেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে আর ফিরতে পারেননি। কয়েক মাস পর, একদিন তিনি আত্মহত্যা করলেন... মা আমাকে বলেছিলেন, এই সত্য গোপন রাখতে। শিক্ষক নিজেও পরিবারকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, তাই আমরা দুজনেই সমাজের চোখ থেকে আড়াল থাকতে এই মিথ্যার জাল তৈরি করি।”

রিয়াদ মীমের হাত ধরে ফিসফিস করে বলল, “তুমি এতো বছর একা এই ভার বহন করেছ... আমার তো তোমার ভালোবাসা দরকার ছিল, সত্য নয়।”

রিয়াদ আজ বুঝল, পত্রিকার সেই হেডলাইনটি—আসলে ছিল অসহনীয় এক পারিবারিক সত্যের বিকৃত রূপ, যার দায়ভার চাপানো হয়েছিল এক নাবালিকার উপর।

 শেষে একটি প্রশ্ন:

আমরা সবাই সত্য জানতে চাই, কিন্তু সেই সত্যের কারণে যে মানুষটির জীবন ভেঙে যায়, তার ভার কে নেবে?

পাঠক, আপনি হলে কী করতেন? রিয়াদের মতো সত্য জেনে মুক্তি পেতেন, নাকি ভালোবাসার কাছে সত্যকে হারাতে দিতেন?

Sign in to leave a comment