Skip to Content

খুশবু

Writer: চন্দ্রা
December 4, 2025 by
খুশবু
Mukto Vabuk
| 2 Comments

#খুশবু 

Writer: চন্দ্রা

****

 সকাল হতে না হতেই গর্ভবতী বৌটিকে বেধরক পেটাচ্ছে ইসমাইল।ছয় মাসের পোয়াতি বৌ।যার কিনা আদর যত্নে সাবধানে থাকার কথা।বর বলেছিলো ভোর সকালে ভাত দিতে। অসুস্থ টিংটিংয়ে শরীরটাকে টেনে নিয়ে ছয়টায় উঠেও শেষ রক্ষা হলো না মেয়েটার।রান্নাটা কোনমতে শেষ করে উঠলেও তাতে পতির মন ভরলো না।আশেপাশের প্রতিবেশী মহিলারা আঙিনার পাশে কান পেতে শুনছে শুধু।কারো কারো কোমল মনে আফসোস ভাসছে আবার কারো চোখে ভাসছে মানবতা বিবর্জিত আনন্দ। ঘরের বৌ এইভাবেই পেটাতে হয়, নইলে উচ্ছন্নে যাবে দুদিনে।এগিয়ে এসে রুখে দাঁড়ানোর বা বৌটিকে পিশাচ'এর হাত থেকে বাঁচানোর ইচ্ছে কারো কারো মনের মধ্যে এলেও সেটা কার্যে পরিণত না করেই আবার নিজেদের কাজে চলে গেলো সকলে। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর তাগিদ নেই কারোই।স্বামী, শাশুড়ির হাতে নির্যাতিত হওয়া যেনো এক অখন্ডিত নিয়ম, লোকাচার।

হোসনে আরা চড়া গলায় গালাগালি দিচ্ছে ছেলের বৌকে। অনতিদূরে ভীত টলমল চোখে দাঁড়িয়ে মৃদু কাঁপছে চার বছরের বাচ্চা ছেলে রমিম।এসব দেখা তার নিত্যদিনের অভ্যাস।একবার ক্রন্দনরত মায়ের দিকে,তো আরেকবার রুদ্র মূর্তি ধারী পিতার দিকে দৃষ্টি ঘুরছে তার।দাদীর দিকেও তাকাতে ভুললো না।মায়ের আহাজারি তার ছোট্ট বুকে দাগ কেটে গেলেও কাউকে কিছু বলার ক্ষমতা নেই,আর না আছে গলা ফাটিয়ে কাদবার জো। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ফুলছে সে।দাদী যদি কাঁদতে দেখে তবে এই সকালে মার একটাও মাটিতে পরবে না।

-সাপের পাঁচ পাও দেখছো?গাতিদারের বেটি হইছে?বেলা না হইলে তার ঘুম ভাঙ্গে না।পাপের ভয় ডর নাই পরানে?সোয়ামীর কথা গায়ে মাখে না যে বৌ শাউড়ির কথা হেয় শুনবো?দোজখে যাবি রে দোজখে। সোনার টুকরা পোলা আমার তারে থাম দেস না?আমি তো হইলাম বাইর বাড়ির বান্দি।ও আব্বা,,ভালো কইরা দে কয়খান।খালি কামে ফাঁকি দিয়া গতর বাঁচানোর ধান্দা।মিথ্যুকের ঘড়ের মিথ্যুক।পেত্যেক দিন (প্রতিদিন)খালি ভাল ঠ্যাহে না,ভাল ঠ্যাহে না?খা মাইর খা।পুডি(পুঁটি)মাছের লাহান পেটটা গাইলা দে। ঘরে খাওন নাই বছর বছর ছাও বিয়াইবো (বাচ্চার জন্ম দেবে)

অসহায় বৌটার চেঁচামেচি বন্ধ হলো শেষে। মাটিতে লুটিয়ে যেতেই ইসমাইল তার হাত থামায়।নির্যাতিতার উস্কো খুস্কো দীঘল কেশ এলোমেলো হয়ে মাটিতে লুটোয়।পিড়ীত মুখমণ্ডল ঢাকা পরে তাতে।হালকা ফুলে ওঠা পেটটা তখনো ওঠানামা করে ধীরলয়ে।কেউ আসে না তার চেতনা ফেরাতে। উৎকণ্ঠা নিয়ে ডাকে না কেউ দরদ ভরা কন্ঠে।ইসমাইল হাতে থাকা আধ ভাঙা চম্বল ডাল খানা সজোরে ছুঁড়ে ফেলে উঠোনে।সদ্য ছেড়া চটি খানা কুড়িয়ে পায়ে গলিয়ে নেয়।প্রথমে ওটাই উঠেছিল মেয়েটির গায়ে।

হাঁফিয়ে গেছে সে ইসমাইল।মা হোসনে আরার মুখ তখনও বন্ধ হয়নি। ইসমাইল খেকিয়ে ওঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে। সেদিন বুক বরাবর ছেলের পায়ের লাথির কথা মনে পরতেই কিছুটা দমে গিয়ে গজর গজর করতে করতে বৃদ্ধা স্থান ত্যাগ করে।যাওয়ার সময় নাতির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়েও যায় সাথে করে। সংসারে তার সুখ নাই। একমাত্র ছেলে সেও হয়েছে অমানুষ আর যে বৌটা এনেছে পছন্দ করে সেটাও জাতের পদের না।

এমনটাই ধারনা হোসনে আরার।


*****

বেলা বাড়তেই বোশেখের সূর্যটা সতেজে একটু একটু করে পূর্ব দিক থেকে সরে গিয়ে ঠিক মাথার উপরে চড়াও হয়েছে। ভীষণ দাবানলে যেনো একটু একটু করে হুঁশ ফিরছে এলোমেলো হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় পর থাকা রমনীর।হাতে পায়ের গিঁটে গিঁটে অসহনীয় ব্যাথা। মাথায় কয়েক মণ ওজনের কিছু একটা চেপে থাকার অনুভূতি। তলপেটের অভ্যন্তরে চিনচিনে ব্যাথাটা অনুভব হতেই মস্তিষ্ক সজাগ হলো তার। মনের মধ্যে সর্বহারা বেদনা আর প্রচন্ড ভয়। অনায়াসেই ডান হাতটা নিয়ে ফেললো পেটের উপর।বাঁ হাতটা মাটির বুকেই পরে রইলো।শুষ্ক চোখ আবারো আদ্র হতে থাকে।কন্ঠে কাঠ ফাটা তৃষ্ণা।

কিন্তু উঠে বসবার জো নেই তার।তীল পরিমাণ শক্তি অবশিষ্ট নেই দেহে। পুনরায় অর্ধ নিমিলিত চক্ষু দ্বয়ের পাতা নিজেদের আঁকড়ে ধরে,,,,


**

যখন রক্তিম কৃষ্ণচূড়া উদীয়মান সূর্যের ডগমগে লালে নিজের শাখা প্রশাখা রাঙিয়ে তুলতো।স্বকীয় রঙের ডালি আরো গাঢ় লালিমায় রাঙিয়ে নিতে সপ্রতিভ হতো, তখন চতুর্দশী কন্যাটি দু হাতের পাতায় চোখ ডলে পুকুর ঘাটে পেতে রাখা খেজুর গাছের গুঁড়িতে বসে নগ্ন ফর্সা পায়ের পাতা কাক চক্ষুর মতো পুস্কুরিনীর স্বচ্ছ জলে চুবিয়ে আপন মনে কথা বলতো।কুচো চিংড়ি আর চ্যালা মাছ যখন অমৃত স্বাদে পায়ের পাতায় চুম্বনে ব্যাস্ত, চঞ্চল কিশোরী তখন ক্ষিপ্র হস্তে সেই মাছ গুলোকে মুষ্টিবদ্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে নিরাশ হতো। কিছুক্ষণ চলতো লড়াই। অবশেষে জয়ী হতো মেয়েটি।বদ্ধ মুঠিতে কয়েকটি চ্যালা, চিংড়ির ছটফটানি।ফোলা ফোলা চোখে মুখে এক অমোঘ প্রাপ্তি,চঞ্চল চোখ দুটিতে বিজয়ের হাসি। অবশেষে নিঃশর্তে নির্দিধায় মুক্ত করত বন্দীদের।আজলা ভরে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতো চোখে মুখে।ভিজে যেতো কানের পাশে, কপালের উপর পরে থাকা বাচ্চা কেশ গুচ্ছ। তাতেই যেনো কিশোরী হয়ে উঠত আরো প্রাণবন্ত, আকর্ষণীয়।একটু দূরে আম ডালে বসে থাকা মাছরাঙা পাখিটি যখন ছোঁ মেরে ধরে নিতো নিজের আহার।মেয়েটি চোখ রাঙানি দিয়ে শব্দ করে উড়িয়ে দিতো পাখিটিকে।এ তার নিজের রাজ্য। এখানে কারো স্বেচ্ছাচারিতা চলবে না।নিরীহ মাছ গুলোকে ধরে ঐ ভোঁতা ঠোঁটে পিষে মারার যন্ত্রণা যেন মেয়েটি নিজে উপলব্ধি করতে পারতো। ঘাটলার পাশে দু চার গাছি কচুরিপানা ভেসে আসতো দক্ষিনা বাতাসে।দল ছেড়েও তাদের মনে দুঃখ নেই।দুটোতে ফুল ফুটেছে।মন খারাপ খানিকটা উড়ে যেত কিশোরীর।ডান হাতের আঁজলা ভরে জল ছিটিয়ে দিতেই নেচে উঠত কচুরিপানা। গোসলের সময় ছুঁয়ে দেখবে বলে মন স্থির করতো কিশোরী। মায়ের কর্কশ কন্ঠ ঝংকারে মুখে আঁধার নামতো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের রাজ্যপাট ফেলে উঠে এসে বাঁ হাতের তালুতে ছাইয়ের মাজন নিয়ে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে ঝকঝকে সাদা দাঁত গুলো যেনো আরো ঝকঝকে করে তোলার প্রয়াসে ঘসাঘসি চলতো কিছুক্ষণ।আবারো সেই পুকুর পাড়ে ফিরে যেতে হতো, তবে সেখানে আর রাজ্য মেলে বসার উপায় নেই কেননা,,পিতা গিয়েছেন ক্ষেতের কাজে সেখানে তাঁর সকালের নাস্তা নিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে ফিরে ছুটতে হবে বিদ্যালয়ে। পড়াশোনায় ভীষণ ভালো। শত

Sign in to leave a comment