Skip to Content

গুপ্ত সত্তা

Writer:Md. Earshad Ali Mondol . He is an Assistant Professor, in the English Department at Saidpur Government Science College
December 6, 2025 by
গুপ্ত সত্তা
Mukto Vabuk
| 1 Comment

গুপ্ত সত্তা

Writer:Md. Earshad Ali Mondol

মানুষ জন্মায় আলোতে, বাঁচে ছায়ায়,

কিন্তু সত্য শেখে গভীর অন্ধকারে।

আলো শরীরকে দেখায়—

অন্ধকার আত্মাকে।

আর গহিন দুঃখের ভেতরেই মানুষ

চেনা পায় নিজের প্রকৃত রূপকারকে।


দুঃখ আসলে কোনো অতিথি নয়—

সে মহাজগতের প্রাচীন শিক্ষক ,

যে মানুষের মনের লুকানো দরজাগুলো

এক এক করে খুলে দেয় নিঃশব্দে।

কেউ দেখে কষ্ট,

কেউ দেখে ক্ষত,

কিন্তু যে চোখে দেখে জ্ঞান—

সে বোঝে দুঃখ আসলে

অস্তিত্বের গোপন পাঠশালা।


মানুষ ভাবে—

দুঃখ তাকে ভাঙে,

আসলে দুঃখ তাকে ভাঁজ করে,

চাপ দিয়ে, মুচড়ে, চূর্ণ করে

এক নতুন চেতনার পাত্র বানায়,

যেখানে সত্য ধারণের শক্তি জন্মায়।


যা সহজে পাওয়া যায়—

তা কখনো চিরস্থায়ী হয় না,

যা যন্ত্রণায় জন্ম নেয়—

তাই হয়ে ওঠে স্থায়ী শাস্ত্র।


দুঃখের প্রতিটি ঢেউ আসলে

সময়ের নীরব কণ্ঠস্বর।

সময় বলে—

“অহংকার কমাও,

সত্য বাড়াও,

নিজেকে দেখো,

নিজেকেই খুঁজে পাও।”


অর্থহীন সম্পর্কগুলো

দুঃখের আলোয় ধুলার মতো উড়ে যায়,

বাকি থাকে কেবল

যা সত্য,

যা জরুরি,

যা চিরকালীন।


জীবন আসলে কোনো যাত্রা নয়—

এ এক অবিরাম অন্বেষণ,

যেখানে পথের চেয়ে পথহারানোই

মানুষকে বেশি শেখায়।

যে হারায়—সে পায়।

যে ভাঙে—সে গড়ে।

যে নীরব হয়—সে শোনে

মহাজগতের অদৃশ্য সুর।


মানুষের দুঃখ তাই

তারাকার মতো—

তারা যত দূরে,

তাদের আলো তত গভীর।

দুঃখ যত গভীর—

তার শিক্ষা তত অমোঘ।


বলা হয়—

দুঃখ ভাগ করলে কমে,

কিন্তু প্রকৃত দুঃখ তো

অন্তরের এমন এক স্থান,

যেখানে মানুষ একাই প্রবেশ করে

যেন এক তীর্থযাত্রী,

যার পথ নির্দেশনা

কেউ দিতে পারে না,

তবু পথ ঠিকই এগিয়ে যায়

অদৃশ্য হাতে বাঁধা।


তুমি কাঁদো—

কিন্তু কাঁদা মানে ভাঙা নয়,

কাঁদা মানে পরিশুদ্ধ হওয়া,

যেমন মেঘ কাঁদে—

তারপরই প্রকৃতি সবুজ হয়।

তেমনি মন কাঁদলে

আত্মা সবুজ হয়ে ওঠে

এক নবজন্মের ভোরে।


বিপদ আসে—

কিন্তু বিপদ শত্রু নয়,

বিপদ হলো

স্রষ্টার লেখা একটি প্রশ্নপত্র

যেখানে উত্তর একটাই—

“ধৈর্য্য”

আর তার ওপর স্বাক্ষর

“বিশ্বাস”।


মানুষ যখন

অহংকারের খোলস ভেঙে

একদম নগ্ন আত্মা হয়ে দাঁড়ায়—

তখনই সে দেখে

স্রষ্টার সবচেয়ে কাছের আলো।

কারণ পূর্ণ হলে মানুষ

নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে,

ভাঙলে মানুষ

স্রষ্টাকে চিনতে শেখে।


সময়ের নৌকা

কখনো শান্ত, কখনো তুফান,

কিন্তু নদী সর্বদা গন্তব্যে পৌঁছায়—

কারণ সেই গন্তব্য

নদীর নয়—

নদীর উৎসেরই ইচ্ছা।

মানবজীবনও তেমনি—

যা ঘটে, তা ঘটারই ছিল,

যা আসে, তা আসারই কথা,

আর যা চলে যায়—

তা সময়ের প্রয়োজন পূর্ণ করেই যায়।


অমাবস্যা রাত দীর্ঘ হলেও

তার ভোর অনিবার্য,

দুঃখের নদী গভীর হলেও

তার সেতু অবিচল।

দুঃখের সাগরে ডুব দিলে

মানুষ ডুবে যায় না—

বরং নিচে লুকানো মুক্তাগুলো তুলে আনে

এক এক করে।


সেই মুক্তাগুলো—

অভিজ্ঞতা,

বোধ,

নম্রতা,

প্রজ্ঞা,

এবং অনিবার্য সত্য—

যে সত্য মানুষকে বলে—

“সুখ সাময়িক;

দুঃখ শিক্ষক;

সময় রাজা;

স্রষ্টা একমাত্র স্থায়ী।”


অতঃপর মানুষ বুঝে—

দুঃখ তাকে শত্রু নয়,

দুঃখ তাকে রচনা করে।

এবং জীবনের শেষ অধ্যায়ে

মানুষ উপলব্ধি করে—

দুঃখই আসলে

অন্তর্জগতের গুপ্ত গ্রন্থ,

যেখানে লেখা থাকে

তার নিজের চূড়ান্ত পরিচয়।

Sign in to leave a comment